সৈয়দ আশরাফ-ওবায়দুল কাদের বাহাস, থামালেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাহাসে জড়িয়ে পড়েন। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। সভায় উপস্থিত মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈঠকের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা ওঠে। ওই সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের কিছু নেতা প্রকাশ্যে দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ন হচ্ছে। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলের সমালোচনার জন্য দলীয় ফোরাম আছে, সেখানে কথা বলা যেতে পারে। প্রকাশ্য জনসভায় দলের দায়িত্বশীল নেতা হয়ে সমালোচনা মানায় না।’

ওই সময় মন্ত্রিসভায় উপস্থিত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আশরাফের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নেন।

সৈয়দ আশরাফ তার বক্তব্যে কারও নাম উল্লেখ না করলেও সবাই বুঝতে পারছিলেন তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশেই কথাগুলো বলছিলেন। সম্প্রতি প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রাখেন তিনি। চট্টগ্রামের এক সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে টাকা পয়সা নিয়ে পালাতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগে কাউয়া ও হাইব্রিডের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি।

সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের পর ওবায়দুল কাদের কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, এখন দলে অনেক গতি এসেছে। দল চাঙ্গা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবখানেই প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ঘুমিয়ে থাকতেন, দলও ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদককে সমর্থন করে বলেন, আগের চেয়ে দলের এখন গতি এসেছে এটা সত্যি।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রিসভার ওই সদস্যরা বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীও তার বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফের নাম উল্লেখ করেননি। টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ ছিল ঘুরেফিরে শোনা যেত তিনি দলে বেশি সময় দেন না। নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না এবং দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন।

দলের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনেকটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে থামিয়ে দিয়ে কথা বলা শুরু করেন। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফ ও ওবায়দুল কাদেরকে কাছে ডেকে একান্তে কিছু কথাও বলেন। তবে ওইসময় তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সেটি জানা যায়নি।

এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় আবার আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো হবে না। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে, এলাকাবাসীর আস্থাভাজন না হলে, এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনে এমপি-মন্ত্রীকে কাছে না পেলে, আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে হলে অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা ও স্থানীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

এ ছাড়া কয়েকজন মন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ নিয়েও আলোচনা তোলেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে বিএনপি এটি প্রণয়ন করেছে। এখানে বিএনপির কোনো নিজস্বতা নেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর